প্রিয় পাঠক আজকের এই পোষ্টে আমরা আলোচনা করব অনুপাত (Ratio) নিয়ে, অনুপাত কাকে বলে ও অনুপাত কত প্রকার ও কি কি?
অনুপাত বলতে কী বোঝায়
অনুপাত বলতে বোঝায় দুটি সমজাতীয় রাশির মধ্যে তুলনা করা। দুটি সমজাতীয় রাশির মধ্যে একটির সঙ্গে অন্যটির তুলনা করে ভগ্নাংশে প্রকাশ করাকে অনুপাত বলে।
অনুপাত হল একটি ভগ্নাংশের রূপ। দুটি রাশির মাঝে ":" চিহ্ন ব্যবহার করে অনুপাত প্রকাশ করা হয়ে থাকে অনুপাতের দুটি রাশি যথা p ও q এর অনুপাতকে p:q লেখা হয়। অনুপাতের p কে পূর্ব রাশি এবং q কে উত্তর রাশি বলা হয়।
অনুপাত কত প্রকার ও কি কি
অনুপাতকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয় যেমন: সরল অনুপাত, মিশ্র অনুপাত, ধারাবাহিক অনুপাত, গুরু অনুপাত, লঘু অনুপাত, বহুরাশি অনুপাত, একক অনুপাত, ব্যস্ত অনুপাত ইত্যাদি। এগুলি সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
সরল অনুপাত: যে অনুপাতে দুটি মাত্র রাশি থাকে তাকে সরল অনুপাত বলে। সরল অনুপাতের দুটি রাশির প্রথমটিকে পূর্ব রাশি এবং দ্বিতীয় রাশিটিকে উত্তর রাশি বলে। ৫:৭ এটি একটি সরল অনুপাতের উদাহরণ এখানে ৫ হল পূর্ব রাশি ও ৭ হল উত্তর রাশি।
মিশ্র অনুপাত: দুই ও তার অধিক সরল অনুপাতের পূর্ব রাশি গুলির গুনফলকে পূর্ব রাশি ও উত্তর রাশি গুলির গুনফলকে উত্তর রাশিতে প্রকাশ করলে যে অনুপাত তৈরি হয় তাকে মিশ্র অনুপাত বলে। যেমন: ২:৫ ও ৭:৩ সরল অনুপাতের মিশ্র অনুপাত হল (২×৭):(৫:৩)=১০:২১, মিশ্র অনুপাতকে যৌগিক অনুপাত ও বলা হয়ে থাকে।
গুরু অনুপাত: যে সরল অনুপাতে পূর্ব রাশি উত্তর রাশির থেকে বড় হয় তাকে গুরু অনুপাত বলে। যেমন: ৬:২, ৯:৪, ৫:৩ ইত্যাদি হল গুরু অনুপাতের উদাহরণ।
লঘু অনুপাত: যে সরল অনুপাতে পূর্ব রাশি উত্তর রাশির থেকে ছোট হয় তাকে লঘু অনুপাত বলে। যেমন: ২:৬, ৪:৯, ৩:৫ ইত্যাদি হল লঘু অনুপাতের উদাহরণ।
ব্যস্ত অনুপাত: যদি কোন সরল অনুপাতের পূর্ব রাশিকে উত্তর রাশি এবং উত্তর রাশিকে পূর্ব রাশি করা হলে যে অনুপাত পাওয়া যায় সেই অনুপাতটিকে পূর্বের অনুপাতের ব্যস্ত অনুপাত বলে।যেমন ৩:৫ এর ব্যস্ত অনুপাত হবে ৫:৩
একক অনুপাত: যে অনুপাতে পূর্ব ও উত্তর রাশির মান সমান হয় তাকে একক অনুপাত বলে। যেমন যদি কোন অনুপাতের পূর্ব রাশি ৫ এবং উত্তর রাশি ও ৫ হয় তাহলে উভয় রাশির মান সমান হবে এবং অনুপাতটি হবে ৫:৫ বা ১:১ অর্থাৎ এটি একটি একক অনুপাত।
বহু রাশি অনুপাত: যে অনুপাতে তিন বা তার অধিক রাশি থাকে তাকে বহুরাশিক অনুপাত বলে।
ধারাবাহিক অনুপাত: যদি দুটি অনুপাতের মধ্যে প্রথম অনুপাতটির উত্তর রাশি এবং দ্বিতীয় অনুপাতটির পূর্ব রাশি পরস্পর সমান হয় তাকে ধারাবাহিক অনুপাত বলে। যেমন: ৫:৭ ও ৭:১১ অনুপাত দুটির ধারাবাহিক অনুপাত হবে ৫:৭:১১
অনুপাতের বৈশিষ্ট্য :
- ভাগের সংক্ষিপ্ত রূপকে অনুপাত বলে।
- অনুপাতে দুটি রাশি থাকে যথা পূর্ব রাশি ও উত্তর রাশি।
- অনুপাত লেখার সময় অনুপাতের রাশি গুলিকে এককে প্রকাশ করতে হয়।
- অনুপাতের রাশি দুটিকে শূন্য ছাড়া অন্য কোন সংখ্যা দিয়ে ভাগ অথবা গুন করলে অনুপাতের মানের কোন পরিবর্তন হয় না।
- ভিন্ন জাতীয় দুটি রাশির অনুপাত গঠন করা সম্ভব নয়।
- অনুপাতের কোন একক নেই। দুটি রাশির মাঝে ":" চিহ্ন ব্যবহার করে অনুপাত গঠন করা হয়।
অনুপাত কিভাবে বের করতে হয়
এবার আমরা জানবো অনুপাত কিভাবে বের করতে হয় এবং অনুপাত নির্ণয়ের সূত্র নিয়ে।
দুটি সংখ্যা একটি ১২ ও অপরটি ৮ হলে সংখ্যা দুটির অনুপাত নির্ণয় করলে সংখ্যা দুটির অনুপাত হবে। প্রথম সংখ্যাটি ১২ ও দ্বিতীয় সংখ্যাটি ৮ হলে সংখ্যা দুটির অনুপাত হল ১২:৮ = ৩:২
একটি অংকের সমাধানের মাধ্যমে অনুপাত বের করার নিয়মটি দেখে নেওয়া যাক।
অনুপাতের অংক প্রশ্ন: একটি বালতিতে ২০ লিটার সরবত রয়েছে এতে চিনি ও লবণের অনুপাত ৯:১ হলে ওই সরবতে কি পরিমান চিনি ও লবণ রয়েছে?
চিনি ও লবণ এর অনুপাত ৯:১ হলে
অনুপাতের সংখ্যা দুটির যোগফল ৯+১=১০
সুতরাং মিশ্রনে চিনির পরিমাণ = ২০ × ৯/১০ = ১৮ গ্রাম
মিশ্রনে লবনের পরিমাণ = ২০ × ১/১০ = ২ গ্রাম
অতএব সরবতে ১৮ গ্রাম চিনি ও ২ গ্রাম লবণ রয়েছে।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রীরা এই পোস্টটিতে আমরা শিখলাম অনুপাত কাকে বলে এবং অনুপাত কত প্রকার ও কি কি? অনুপাত পড়া ও লেখার নিয়ম কি? অনুপাত কিভাবে বের করতে হয় এবং অনুপাত নির্ণয়ের সূত্র সমন্ধে। আপনার মনে এই পোস্ট নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন এবং পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন