পর্বত ও মালভূমির পার্থক্য

পৃথিবী পৃষ্ঠের উপরিভাগ সর্বত্র সমান নয় কোথাও উঁচু আবার কোথাও নিচু। পৃথিবী পৃষ্ঠের উপরিভাগের ভূমিরূপের উচ্চতা, গঠন ও বৈশিষ্ট্য অনুসারে তিন ভাগে ভাগ করা হয় যথা: পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি। এই পোস্টটিতে পর্বত ও মালভূমির মধ্যে পার্থক্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।পৃথিবী পৃষ্ঠের সর্বচ্চ উঁচু ভূমিরূপকে পর্বত বলে এবং সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে সামান্য উঁচু সুবিস্তৃত মৃদু ঢাল যুক্ত সমতল ভূমিকে সমভূমি বলে এবং সমভূমি থেকে উঁচু এবং পর্বতের থেকে নিচু টেবিলের ন্যায় ভূ-ভাগকে মালভূমি বলে। আজ আমরা জানবো পর্বত ও মালভূমির পার্থক্য। পর্বত ও মালভূমির পার্থক্য লেখ এই প্রশ্নটি প্রায় পরিক্ষায় এসে থাকে। এখানে দেওয়া উত্তরটি ভালোভাবে পড়লে পরিক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া যাবে।

পর্বত ও মালভূমির মধ্যে পার্থক্য গুলি হল

সংজ্ঞা :

ভূপৃষ্ঠের উপর অবস্থিত সমুদ্রতল থেকে ১০০০ মিটারের বেশি উচ্চতা সম্পন্ন বহুদূর বিস্তৃত খাড়া ঢাল যুক্ত শিলাময় ভূ-ভাগকে পর্বত বলে।

সমুদ্রতল থেকে প্রায় ৩০০ মিটার উঁচু খাড়া ঢাল যুক্তবহুদূর বিস্তৃত টেবিলের ন্যায় ভূমিরূপকে মালভূমি বলে ।

উদাহরণ:

পর্বতের উদাহরণ গুলি হল হিমালয়, রকি, আন্দিজ, আল্পস ইত্যাদি।

মালভূমির উদাহরণ গুলি হল ছোটনাগপুর মালভূমি, ডেকান ট্যাপ, তিব্বত ইত্যাদি

সৃষ্টির কারণ:

পর্বত সাধারণত ভূপৃষ্ঠের ভাঁজ,চ্যুতি ও অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্টি হয়ে থাকে।

মালভূমি প্রধানতঃ অগ্ন্যুৎপাত, টেকটনিক কার্যাবলী এছাড়াও বিভিন্ন বহির্জাত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়ে থাকে।

উচ্চতা:

পর্বত এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০০ মিটারের অধিক হয়।

মালভূমির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০ মিটারের অধিক হয়ে থাকে।

প্রকৃতি:

পর্বত গুলি বহুদূর বিস্তৃত খাড়া ঢাল যুক্ত তীক্ষ্ম ও উঁচু চূড়া বিশিষ্ট হয়।

মালভূমি গুলি হল সাধারণত উঁচু বিস্তীর্ণ ভূমিরূপ।

জলবায়ু:

পর্বত এর উচ্চতা বেশি হওয়ায় পার্বত্য অঞ্চল গুলির জলবায়ু শীতল প্রকৃতির হয়ে থাকে।

মালভূমির উচ্চতা কম হওয়ার কারণে মালভূমি অঞ্চলের জলবায়ু উষ্ণ, রুক্ষ্ম ও শুষ্ক প্রকৃতির হয়ে থাকে।

নদ-নদী:

পার্বত্য অঞ্চলের নদী গুলি বরফ গলা জলে পুষ্ট এবং এই নদী গুলি নিত্যবহ নদী ফলে এই নদী গুলিতে সারাবছর জল প্রবাহ বজায় থাকে।

মালভূমি অঞ্চলের নদী গুলি বৃষ্টির জলে পুষ্ট এই নদী গুলি অনিত্যবহ নদী এই নদী গুলিতে সারাবছর জল থাকে না।

খনিজ সম্পদ:

পার্বত্য অঞ্চলে খনিজ সম্পদের পরিমাণ কম।

মালভূমি অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়।

উপত্যকা:

পর্বত উঁচু খাড়া ঢাল বিশিষ্ট হওয়ার কারণে এই অঞ্চলের উপত্যকা গুলি গভীর ও সরু হয়।

মালভূমির উচ্চতা কম ও বিস্তীর্ণ হওয়ার কারণে মালভূমি অঞ্চলের উপত্যকা গুলি মূলত অগভীর ও প্রশস্ত হয়।

চূড়া:

পর্বতের চূড়া গুলি তীক্ষ্ম ও উঁচু নীচু খাড়া ঢাল যুক্ত হয়ে থাকে।

মালভূমির কোন চূড়া থাকে না। মালভূমির উপরিভাগ সমান হয়ে থাকে।

প্রধান উদ্ভিদ:

পার্বত্য অঞ্চলে প্রধানতঃ পাইন, ফার, দেবদারু, বার্চ, ওক, সিডার, স্পুস, লারচ, উইলো, পপলার ইত্যাদি উদ্ভিদ দেখা যায়।

মালভূমি অঞ্চলের প্রধান উদ্ভিদ গুলি হল শাল, সেগুন, শিরীষ, পলাশ, মহুয়া, চন্দন, অর্জুন, তুঁত, শিমুল ইত্যাদি।

মৃত্তিকা:

পার্বত্য অঞ্চলে প্রস্তরময়, অনুর্বর পডসল মৃত্তিকা পাওয়া যায়। এই মাটি অনুর্বর, প্রস্তরময় হওয়ার কারণে এই মৃত্তিকা ফসল উৎপাদনের পক্ষে একেবারে উপযোগী নয়।

মালভূমি অঞ্চলে ল্যাটেরাইট মাটি দেখা যায়। এই মাটি লাল রঙের ইটের মতো শক্ত হয়ে থাকে। এই মাটির জলধারন ক্ষমতা কম এবং এই মাটি অনুর্বর হওয়ায় কৃষি কাজের পক্ষে উপযোগী নয়।

আরও পড়ুনঃ

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন