বক্সারের যুদ্ধ

বক্সারের যুদ্ধ

1764 সালে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং মোঘল সম্রাট শাহ আলম ও বাংলার নবাব মীর কাসিম ও অযােধ্যার নবাব সুজা-উদদৌলা মিলিত জোটের সঙ্গে বক্সারের প্রান্তরে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তা বক্সারের যুদ্ধ নামে পরিচিত।

1760 সালের বিপ্লব কাকে বলে

1757 সালে রবার্ট ক্লাইভ মিরজাফরের সাহায্যে পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের পর মিরজাফরকে বাংলার নবাব বানিয়েছিল এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার নবাবকে পুতুল নবাবে পরিণত করে ও বাংলায় বিনা শুল্কে অবাধ বানিজ্যের অধিকার লাভ করে ক্রমাগত বাংলার অর্থ সম্পদ শোষন করে এবং কোম্পানি হয়ে ওঠে বাংলার রাজনীতির প্রকৃত নিয়ন্ত্রক। কোম্পানির এই আচারনে মিরজাফর বিরক্ত হয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্ষমতা খর্ব করার জন্য গোপনে ওলন্দাজদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এই খবর পাওয়া মাত্রই রবার্ট ক্লাইভ বিদারার যুদ্ধে ওলন্দাজদের পরাজিত করে তারিয়ে দেন এরপর কোম্পানি মিরজাফরকে সিংহাসনচ্যুত করে মিরজাফরের জামাই মির কাসিমকে বাংলার নবাব বানান। এইভাবে বিনা রক্তপাতে বাংলার নবাব পরিবর্তনের ঘটনাকে 1760 সালের বিপ্লব বলে।

বক্সারের যুদ্ধের কারণ

বক্সারের যুদ্ধের কারণ

মিরকাসিম কোম্পানির সঙ্গে মিত্রতা থাকলেও মিরকাসিম ছিলেন খুবই দূরদর্শী, বিচক্ষন ও আত্মসচেতন নবাব। ইংরেজদের ক্ষমতা খর্ব করার জন্য মির কাসিম বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।

মুঙ্গেরে রাজধানী স্থানান্তর: ইংরেজদের সঙ্গে দূরত্ব স্থাপন করতে মির কাসিম সর্ব প্রথম বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে বিহারের মুঙ্গেরে স্থানান্তর করেন। বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদে ছিল ইংরেজদের প্রভাব ছিল সর্বাধিক যার জন্য নবাব বাংলার রাজধানী স্থানান্তর করেন।

সাময়িক শক্তি বৃদ্ধি: মির কাসিম তার সাময়িক শক্তি বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেন। তিনি তার সেনাবাহিনীকে ইউরোপীয় ধাঁচে প্রশিক্ষণ দিতে চেয়েছিলেন। তিনি সেনাবাহিনীতে সমরু, আর্মেনিয়া মার্কার সহ-সভাপতি ও গ্রেগরিকে প্রধান সেনাপতি পদে নিযুক্ত করেন।

বন্দুক নির্মানের কারখানা প্রতিষ্ঠা: মিরকাশিম তার সাময়িক শক্তি বৃদ্ধির জন্য উন্নত মানের অস্ত্র কারখানা নির্মাণ করেন।

আর্থিক পদক্ষেপ: একজন স্বাধীন নবাবের মতো মির কাসিম বাংলার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন (i) মির কাসিম জমিদারদের উপর বাড়তি কর চাপান (ii) দূর্নীতি গ্রস্থ কর্মচারীদের বরখাস্ত করেন (iii) বিদ্রোহী জমিদারদের দমন করেন (iv) ইংরেজদের অনুগত কর্মচারী ও জমিদারদের কঠোর শাস্তি দেন।

ফরমান লাভ: মির কাসিম মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা রাজস্বের বিনিময়ে ফরমান লাভ করেন

শুল্ক বিবাদ: ইংরেজি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে মুঘল সম্রাট ফারুকশিয়ারের কাছ থেকে ফরমান লাভের পর কোম্পানি বাংলায় বিনা শুল্কে অবাধ বাণিজ্য করতে থাকে এবং কোম্পানির ফরমানের করায় নবাব ও দেশীয় বণিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অবস্থায় নবাব দেশীয় বণিকদের শুল্ক তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ফলে ইংরেজদের সঙ্গে তার বিরোধের সৃষ্টি হয়।

বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব ও ফলাফল

বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব ও ফলাফল

বাংলায় কোম্পানির আধিপত্যের সূচনা: বক্সারের যুদ্ধের ফলে বাংলায় কোম্পানির আধিপত্যে বিস্তারের সূচনা হয়। বক্সারের যুদ্ধের পর বাংলার রাজনৈতিক ক্ষমতা কোম্পানির হাতে চলে আসে। কোম্পানি হয়ে ওঠে বাংলার প্রকৃত শাসক এবং নবাব কোম্পানির বৃত্তিভোগী হাতের পুতুললে পরিনত হয়।

দেওয়ানী লাভ: বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পর ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভ করেন। দেওয়ানী লাভের ফলে কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করেন। 

আর্থিক লুন্ঠনের সূচনা: বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পর কোম্পানি বাংলা বিহার উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভ করেন ফলে কোম্পানি যেমন একদিকে বিনা শুল্কে অবাধ বাণিজ্য করতে থাকে অন্যদিকে অতিমাত্রায় রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে বাংলা অর্থ সম্পদের লুন্ঠন করে। এছাড়াও কোম্পানি যুদ্ধের ক্ষতিপূরণের দাবিতে অযােধ্যার নবাব সুজা-উদদৌলার কাছ থেকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা আদায় করেন।

ভাগ্য নির্ধারণ: বক্সারের যুদ্ধ ছিল ভারতের ভাগ্য নির্ধারণ যুদ্ধ। এই যুদ্ধে যদি ইংরেজরা পরাজিত হত তাহলে ভারতের ইতিহাস অন্য ভাবে লেখা হত।

সাম্রাজ্যের প্রসার: বক্সারের যুদ্ধ জয়ের ফলে উত্তর ভারতে কোম্পানির আধিপত্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। পলাশীর যুদ্ধ শুধু মাত্র বাংলার নবাবের সঙ্গে হয়েছিল কিন্তু বক্সার এর যুদ্ধ বাংলার সাথে সাথেই দিল্লির মুঘল সম্রাট ও অযোধ্যার নবাব ও পরাজিত হন। ফলে সমগ্র উত্তর ভারতে কোম্পানির আধিপত্যে প্রতিষ্ঠিত হয়।

উপসংহার: বক্সারের যুদ্ধই ছিল প্রকৃত যুদ্ধ যেই যুদ্ধে ভারতের ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছিল। বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পরই প্রকৃত অর্থে ভারতের ইতিহাসে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনা হয়।

বক্সারের যুদ্ধ mcq

১) বক্সারের যুদ্ধ কবে কাদের মধ্যে হয়েছিল?
বক্সারের যুদ্ধ 1764 সালে বাংলার নবাব মীর কাসিম, মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ও অযোধ্যার নবাব সুজা-উদদৌলার মিলিত জোটের সঙ্গে বিট্রিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে হয়েছিল।

২) বক্সারের যুদ্ধের সময় বাংলার নবাব কে ছিলেন?
বক্সারের যুদ্ধের সময় বাংলার নবাব ছিলেন মীর কাসিম।

৩) বক্সারের যুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল?
বক্সারের যুদ্ধ বাংলার নবাব ছিলেন মীর কাসিম, অযোধ্যার নবাব সুজা-উদদৌলার এবং মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে হয়েছিল।

৪) বক্সারের যুদ্ধ কত সালে সংঘটিত হয়?
বক্সারের যুদ্ধ ১৭৬৪ সালে সংঘটিত হয়

৫) বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজ সেনাপতি কে ছিলেন?
বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজ সেনাপতি ছিলেন মেজর হেক্টর মনরােে।

৬) বক্সারের যুদ্ধের সময় মুঘল সম্রাট কে ছিলেন?
বক্সারের যুদ্ধের সময় মুঘল সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় শাহ আলম।

৭) বক্সারের যুদ্ধ কোথায় হয়েছিল?
বক্সারের যুদ্ধ বিহারের বক্সারে হয়েছিল।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন