দেওয়ানী অধিকার দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা ও ছিয়াত্তরের মন্বন্তর এর সম্পর্ক

দেওয়ানী অধিকার ও দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা

1757 খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা সঙ্গে পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জয়লাভের পর বাংলায় অবাধ শোষন শুরু করে এবং 1765 খ্রিষ্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পর ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে দেওয়ানী লাভ করে। দেওয়ানী লাভের ফলে কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার ভূমিরাজস্ব সংগ্রহ করার অধিকার লাভ করে ভারতে‌র রাজনীতিতে কোম্পানির আধিপত্যের সূচনা ঘটে। দেওয়ানী লাভের পর বাংলায় দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার সূচনা হয়। মুঘল আমলে শাসন ব্যবস্থা দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল যথা দেওয়ানী ও নিজামত। দেওয়ানীতে রাজস্ব আদায় ও দেওয়ানী মামলার দায়িত্ব থাকত এবং নিজামতে শান্তিশৃঙ্খলা ফৌজদারি মামলার দায়িত্ব থাকত। 1765 সালে দেওয়ানী লাভের পর বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানীর দায়িত্ব ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে চলে যায় এবং নিজামত এর দায়িত্ব নবাবের হাতেই থাকে। এর ফলে কোম্পানি হয়ে ওঠে বাংলার প্রকৃত শাসন ক্ষমতার অধিকারী এবং নবাব হন নাম মাত্র শাসক।প্রশাসনিক দায়িত্ব নবাবের হাতে থাকলেও রাজস্ব আদায় ও আর্থিক সম্পদ থেকে বঞ্চিত থাকায় সুশাসন ব্যবস্থা গঠন করা নবাবের পক্ষে সম্ভব ছিল না এবং কোম্পানির হাতে সমস্ত আর্থিক সম্পদ ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ার পরও কোম্পানি কোন সুশাসন ব্যবস্থা গঠন করেননি অর্থাৎ দেওয়ানী লাভের ফলে কোম্পানি পেয়েছিল দায়িত্বহীন ক্ষমতা আর নবাব পেয়েছিল ক্ষমতাহীন দায়িত্ব।

দেওয়ানী অধিকার দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা ও ছিয়াত্তরের মন্বন্তর এর সম্পর্ক

দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা ও ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কিভাবে একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার পর কোম্পানির আর্থিক শোষন বাংলায় চরমে পৌঁছায়। দেওয়ানী লাভের আগে বাংলায় যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা হত দেওয়ানী লাভের পর বাংলায় রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। কোম্পানিও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় কুশাসন ও অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। সেই সময় সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশার কোন অন্ত ছিল না। রাজস্ব আদায়ের জন্য জমিদাররা সাধারণ মানুষের উপর চরম অত্যাচার করতো ফলস্বরূপ সেই একই সময় 1770 খ্রিষ্টাব্দে (১১৭৬ বঙ্গাব্দ) বাংলায় অনাবৃষ্টির জন্য শস্যহানির ফলে এক মর্মান্তিক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় যা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের ফলে বাংলায় প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যু হয়। যদিও অনাবৃষ্টির কারনে শস্যহানির ফলে এই দুর্ভিক্ষের সূচনা হলেও কোম্পানির দুর্নীতির শাসন নীতি ও দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা এই দুর্ভিক্ষকে সর্বগ্রাসী ,ব্যাপক, বিভীষিকাময় ও লোকক্ষয়কারী তুলেছিল।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন