বিশ্বায়নের সংজ্ঞা দাও

বিশ্বায়নের সংজ্ঞা 

বর্তমান বিশ্বের বহু পরিচিত একটি শব্দ Globazation যার অর্থ হল বিশ্বায়ন। সহজ কথায় বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও নিবিড় করার পন্থা হল বিশ্বায়ন। সমাজ বিজ্ঞানী রোনাল্ড রবার্টসন সর্বপ্রথম বিশ্বায়ন শব্দটি প্রবর্তন করেন তার মতে বিশ্বায়ন হল সমস্ত বিশ্বকে সংকুচিতকরণ ও একত্রীকরণ করা। এক কথায় বলতে বোঝায় এক ও অবিভক্ত বিশ্ব গঠন হল বিশ্বায়নের মূল ধারনা। বিশ্বায়নকে এমন এক বিশ্বব্যাপী প্রকিয়া বলে চিহ্নিত করা যায় যাতে রাষ্ট সংক্রান্ত ধারনার অবসান ঘটিয়ে অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী আদান প্রদান করা। সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি সহ সমস্ত কিছুই বিশ্বায়নের আলোচিত বিষয়। বিশ্বায়নের সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা নির্দেশ করা সম্ভব হলেও। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বিশ্বায়নের সংজ্ঞা দিয়েছেন। জোসেফ স্টিগলিৎ এর মতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনগণের মধ্যে এমন ঘনিষ্ঠ সংহতি সাধন এবং পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিকাশ  ঘটানোই হল বিশ্বায়ন।

বিশ্বায়নের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো

১) বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সংযোগ স্থাপন: বিশ্বায়নের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল বিশ্বায়ন বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ স্থাপন করে থাকে।

২) মুক্ত বাজার অর্থনীতি প্রসার: বিশ্বায়ন মুক্ত বাজার অর্থনীতি প্রসার করতে চায়। বিশ্বে মুক্ত বাজার অর্থনীতির ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা অন্য রাষ্ট্রে অবাধ বিনিয়গ করতে পারবেন। বিশ্বায়ন বিশ্বের সমগ্র বাজারকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে চায়। 

৩) উদারীকরণের প্রসার: বিশ্বায়নের সঙ্গে উদারীকরণের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্বায়ন উদারীকরণের প্রসার ঘটাতে সক্ষম।

৪) তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ: বিশ্বায়নের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল তথ্য প্রযুক্তির অবাধ বিকাশ। বিশ্বায়নের যুগে তথ্য প্রযুক্তির অবাধ উন্নতি জাতি রাষ্ট্রের নিয়ম-কানুন ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে সমগ্র বিশ্বকে এক ছাতার তলায় এনেছে। ইন্টারনেট ব্যবস্থা সমগ্র বিশ্বকে একসাথে যুক্ত করে বিশ্বায়নের এক জাতি এক বিশ্বব্যবস্তা গড়ে তুলছে।

৫) পারস্পরিক নির্ভরশীলতা: বিশ্বায়ন বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার পরিবেশ গড়ে তোলে। প্রতিটি দেশ পারস্পরিক নির্ভরশীল হওয়ায় বিভিন্ন দেশের স্বার্থ, মতাদর্শ এবং ব্যাবসাবাণিজ্যের বাধাকে মুছে দিতে সক্ষম হয়।

৬) বহুজাতিক সংস্থার আধিপত্য বিস্তার: বিশ্বায়ন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহুজাতিক সংস্থার আধিপত্য বিস্তার লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কর্পোরেট তাদের প্রাধান্য সুনিশ্চিত করেছে। গবেষকরা মনে করেন সমগ্র বিশ্বে রাষ্ট্রের পাশাপাশি কর্পোরেট সংস্থাগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

৭) শিল্প-সাংস্কৃতিক  বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অবাধ উন্নতি: বিশ্বায়ন কোন একটি রাষ্ট্রের শিল্প সাংস্কৃতি ও প্রযুক্তি বিজ্ঞান সেই রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে সীমিত না থেকে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-শিল্প সংস্কৃতির মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে, বিজ্ঞান প্রযুক্তির অবাধ উন্নতি, টিভি, টেলিফোন, ইন্টারনেট এসব কিছুই বিশ্বায়নের ফল।

৮) পরস্পরিক আর্থিক নির্ভরশীলতা: বিশ্বায়ন আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে আর্থিক দিক থেকে পারস্পর নির্ভরশীল করে তুলেছে।

৯) ভৌগোলিক সীমানার গুরুত্ব হ্রাস: বিশ্বায়নের ফলে রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমানার গুরুত্ব হ্রাস পায়। বিশ্বায়নের ফলে যেমন কোন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরিন ভূখন্ডের অবাধ ক্ষমতা ভোগ করতে পারেনা। তেমনই বৈহিক ভূখন্ডের উপর অবাধ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না কারণ বিশ্বায়নে বিশ্বের সমগ্র রাষ্ট্র একে অপরের উপর নির্ভরশীল। এবং বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রই বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতি ও নির্দেশ মেনে চলে। ফলে বর্তমান সময়ে চিরাচরিত সার্বভৌম ধারণার পরিবর্তন ঘটছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন