ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতার কারণ গুলি নিচে আলোচনা করা হলো। ক্রিপস মিশন ব্যর্থতার কারণ কি? ক্রিপস মিশন কেন ব্যর্থ হয়েছিল
ক্রিপস মিশন প্রস্তাব কি
১৯৩৯ খ্রীস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটিশ সরকার ভারতকে যুদ্ধরত দেশ হিসেবে ঘোষণা করেন। এবং এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকারের কাছে ভারতীয়দের পূর্ণ সহযোগিতা ও সমর্থনের প্রয়োজন পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার এবং ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ আলোচনার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ভারতে আসেন যা ক্রিপস মিশন নামে পরিচিত। এবং ১৯৪২ খ্রীস্টাব্দে ২৪ শে মার্চ স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ভারতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে একগুচ্ছ প্রস্তাব পেশ করেন যা ক্রিপস প্রস্তাব নামে পরিচিত। ভারতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে ক্রিপস প্রস্তাব গ্রহণ যোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, হিন্দু মহাসভা, মুসলিম লীগ, শিখ সম্প্রদায় ক্রিপস মিশনে তিব্র বিরোধীতা করেন ।
ক্রিপস মিশন কেন ভারতে আসে
1939 সালে সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হওয়ার পর যখন মিত্রশক্তি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জাপানের কাছে পরাজয়ের সম্মুখীন হয় তখন ব্রিটিশ চেয়েছিল ভারত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের সমর্থন ও সাহায্য করুক এবং যখন ভাইসরয় কংগ্রেসের সাথে কোন আলোচনা ছাড়াই ভারতকে যুদ্ধে নিক্ষেপ করে, তখন ব্রিটিশ সরকার ও কংগ্রেসের মধ্যে এক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এই অচলাবস্থা দূর করতে 1942 খ্রীষ্টাব্দের প্রথম দিকে ব্রিটিশ সরকার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একজন বিশেষ সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসকে ভারতে পাঠাতে হয়েছিল।
ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতার কারণ :
পূর্ন স্বাধীনতার কথা উল্লেখ না থাকায় এই প্রস্তাব ব্যর্থ হয়ে ছিল। এই প্রস্তাবে পূর্ণ স্বাধীনতাদানের কোন উল্লেখ ছিল না। এই প্রস্তাবে ব্রিটিশ সরকারের অনিচ্ছুক মনোভাব প্রকাশ পায় তাই ভারতের নেতৃবৃন্দ এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করেন।
এই প্রস্তাবে পৃথক সংবিধান রচনার দাবিকে মেনে নিয়ে পরোক্ষভাবে পাকিস্তানের দাবিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় অর্থাৎ এই প্রস্তাবে দেশ বিভাজনের ইঙ্গিত থাকায় কংগ্রেস তা প্রত্যাহার করেন। গান্ধিজি এই প্রস্তাবের সমালোচনা করে মন্তব্য করেছিলেন তিনি বলেছিলেন "এটি একটি ফেল করা ব্যাঙ্কের তামাদি চেক" (a post-dated cheque on a crushing Bank) ।
ভারতের প্রতিরক্ষার পূর্ণ দায়িত্ব ভারতীয়দের হাতে ছেড়ে দিতে ব্রিটিশ সরকার রাজি ছিল না । প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ভারতীয়দের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় কংগ্রেসের পক্ষে এই প্রস্তাব মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
ভারত বিভাজনের আশঙ্কায় হিন্দু মহাসভা এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করেন।
কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ ছাড়াও ভারতের অন্যান্য বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের কাছে এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য ছিল না তাই এই প্রস্তাব ব্যর্থ হয়ে ছিল। ১৯৪২ খ্রীস্টাব্দে ১২ এপ্রিল ক্রিপস প্রস্তাব তুলে নেওয়া হয় ।
ক্রিপস মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ইংল্যান্ডে ফিরে যান এবং 1942 সালে আগস্ট মাসে গান্ধীজির নেতৃত্বে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সূচনা হয়।
১. ক্রিপস মিশন কবে ভারতে আসে?
উঃ ক্রিপস মিশন ১৯৪২ ভারতে আসেন।
২. ক্রিপস মিশনের সদস্য কে কে ছিলেন?
উঃ ক্রিপস মিশনের সদস্যদের প্রধান ছিলেন স্টাফোর্ড ক্রিপস এবং তার সাথে ছিলেন লর্ড প্রিভি সিল এছাড়াও হাউস অফ কমনের নেতা সহ রাজ্য পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন।
৩. কার নেতৃত্বে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে?
উঃ স্টাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে।
৪. ক্রিপস মিশন যখন ভারতে এসেছিল তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কে ছিল?
উঃ ক্রিপস মিশন যখন ভারতে এসেছিল তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উইনস্টন চার্চিল।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন